মার্কিন আইন দিয়ে যেভাবে চলছে ডিজিটাল সাম্রাজ্যবাদ

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর সীমানা নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই। উদাহরণস্বরূপ, বলা যায় এক্সের কথা। এক সময় যাকে বলা হতো টুইটার। এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬০ কোটির বেশি। প্রায় প্রতিটি দেশে এর ব্যবহারকারী রয়েছে। আবার এই প্রত্যেকটি দেশেরই নিজস্ব আইন রয়েছে।

কিন্তু বিভিন্ন দেশের জাতীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার স্বার্থ ও মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর স্বার্থ প্রায়শই সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না। যদিও অনেক সরকার সোশ্যাল মিডিয়ার ভুল তথ্য, অনলাইন চরমপন্থা এবং কারসাজির মতো সমস্যা সমাধানের জন্য নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে বা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। এই উদ্যোগগুলো আবার কর্পোরেট প্রতিরোধ, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং বাকস্বাধীনতাবিরোধী বলে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিও হয়েছে।

এমন ঘটনার সবশেষটি ঘটে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ওই সময় ব্রাজিলের বিচার বিভাগ এবং আমেরিকাভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে নতুন উত্তেজনা দেখা দেয়।

ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপ এবং ভিডিও শেয়ারিং গ্রুপ রাম্বল ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আলেকজান্ডার ডি মোরেসের বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। এর আগে ব্রাজিলে ভুল তথ্য প্রচারের সাথে যুক্ত দুটি প্ল্যাটফর্মের অ্যাকাউন্ট স্থগিত করার আদেশ দিয়েছিলেন ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের এই বিচারপতি।

এর আগে ইলন মাস্কের এক্সও ব্রাজিলের এমন একটি রায়ের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালাতে চেয়েছিল। তবে তাতে সফল হয়নি এক্স।

তবে এ ঘটনাগুলো একটি বিষয় স্পষ্ট করে যে, মার্কিন রাজনৈতিক ও কর্পোরেট ব্যক্তিরা বিদেশি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষকে দুর্বল করার চেষ্টা করতেই মামলাগুলো করে। তারা বিশ্বব্যাপী সার্বভৌম নীতির চেয়ে দেশীয় মার্কিন আইন ও কর্পোরেট সুরক্ষাকে প্রাধান্য দেয়।

ব্রাজিলের এই বিরোধের মূলে রয়েছেন অ্যালান ডস সান্তোস নামের একজন ডানপন্থী প্রভাবশালী ব্যক্তি। যিনি ব্রাজিল থেকে পালিয়ে আমেরিকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২০২১ সালে সহিংসতা উস্কে দেওয়ার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান।

ডস সান্তোস মার্কিন মুল্লুক থেকে তাঁর অনলাইন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। মার্কিন কর্তৃপক্ষের দাবি সান্তোসের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে বাকস্বাধীনতাসম্পর্কিত বিষয়গুলো জড়িত। এ কারণে তাঁকে ব্রাজিলে ফিরিয়ে দিচ্ছে না আমেরিকা।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প মিডিয়া এবং রাম্বলের মামলা দুটি জিনিস করার চেষ্টা করে। প্রথমত, এটি ব্রাজিলের বিচারিক পদক্ষেপগুলোকে তদারকির পরিবর্তে সেন্সরশিপ হিসাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে। দ্বিতীয়ত, এটি ব্রাজিলের আদালতের পদক্ষেপকে আঞ্চলিক আগ্রাসন হিসাবে বর্ণনা করতে চাইছে।

তাদের অবস্থান হলো, ডস সান্তোসের ঘটনার লক্ষ্যবস্তু ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাই তিনি আমেরিকার সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে প্রদত্ত বাকস্বাধীনতা সুরক্ষার আওতাভুক্ত। কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তি ব্রাজিলে বিভ্রান্তি ও ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত, সেই বিষয়টি তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ না।

গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ফ্লোরিডাভিত্তিক একজন বিচারক রায় দেন যে, রাম্বল এবং ট্রাম্প মিডিয়াকে ব্রাজিলের আদেশ মেনে চলার প্রয়োজন নেই।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব মামলা কর্পোরেট লবিং এবং রাজনৈতিক চাপ দিয়ে বিদেশি বিচারব্যবস্থায় আইনি হস্তক্ষেপের একটি পদক্ষেপ। মার্কিন আদালতগুলোকে এখন প্ল্যাটফর্মের জবাবদিহিতা সম্পর্কিত বিদেশি সিদ্ধান্তগুলোকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।

এই মামলার ফলাফল এবং বৃহত্তর আইনি কৌশল কেবল ব্রাজিলের জন্যই নয়, বরং যেকোনো দেশ বা অঞ্চলের জন্য হুমকিস্বরুপ। এর প্রভাবকে সুদূরপ্রসারী হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা।

তথ্যসূত্র: দ্য কনভারসেশন

আরও খবর